শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়াঃ
রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয়রা। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আজ প্রায় ৮ বছর পার হতে চললেও, অপরাধ প্রবণতা কমেনি, বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গারা এই শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে, এই দীর্ঘ সময়ে ক্যাম্পগুলো অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যার ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। ক্যাম্পে গুলাগুলি, খুন, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালান, অপহরণের মতো নানান অপরাধমূলক কার্যকলাপ বেড়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদের জীবনে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের ২১ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া মোছনী রেজিস্টার্ড ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন স্থানীয় বাড়িতে ডাকাতি এবং দুজন যুবককে অপহরণের ঘটনা এই সংকটের সাম্প্রতিক উদাহরণ।ডাকাত দলের সদস্যরা ওই রাতে দুদু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ তারেক (২২) ও মোহাম্মদ রাসেল (২০) কে অপহরণ করে এবং ৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ আদায়ের পর তাদের ছেড়ে দেয়। এই ঘটনা জানাজানি হলে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এপিবিএন সদস্যরা ক্যাম্পে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, রোহিঙ্গাদের আগমন এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটিয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণ, মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধে লিপ্ত। আমাদের অনেক মানুষকে তারা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। আমরা ক্যাম্পের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, “মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর তারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। আর অপরাধীরা মানব পাচার ও মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যতদিন রোহিঙ্গারা নিজ দেশে প্রত্যাবাসিত না হবে, ততদিন আমাদের মনে শান্তি ফিরবে না।
উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, এই অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়তে পারে এবং তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। তারা প্রশাসনের প্রতি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় জনগণের মতে, এই সংকটের সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। যত দ্রুত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, তত দ্রুত এই অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও উখিয়া-টেকনাফের মানুষদের মনে আতঙ্ক কমেনি, বরং বেড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধের সংখ্যা বাড়ছেই, যা স্থানীয়দের জীবনে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply